‘মাশরুম” ব্যাঙের ছাতার মতো এক ধরণের ছত্রাক জাতীয় গাছ। মাশরুম ও ব্যাঙের ছাতা দেখতে একই রকম হলেও এদের মাঝে অনেক পার্থক্য আছে। প্রাকৃতিক পরিবেশে জন্ম নেওয়া কোন কোন মাশরুম বিষাক্ত হয় এবং সেগুলো খাওয়া যায় না। সূর্যের আলোয় প্রাকৃতিকভাবে খুব বেশি মাশরুম জন্মাতে পারে না তাই প্রাকৃতিক উপায়ে খাবারের জন্য বেশি করে মাশরুম পাওয়া যায় না। আমাদের দেশে অনেক স্থানে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মাশরুম চাষ করা হচ্ছে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষকরা মাশরুম অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার। আমাদের দেশের অনেক জায়গায় বিশেষ করে ঢাকা, পার্বত্য চট্টগ্রাম, মধুপুর প্রভৃতি স্থানে এখন ব্যবসায়িক ভিত্তিতে মাশরুম চাষ ও বাজারজাত করা হচ্ছে। মাশরুম চাষ করে পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি বাড়তি আয় করাও সম্ভব। মাশরুম চাষ করতে আবাদী জমির প্রয়োজন হয় না।মাশরুমের ঔষধিগুণ ও নানাবিধি ব্যবহার
- বিভিন্ন রোগব্যধিতে মাশরুমের ব্যবহার সুবিদিত। বাত, ব্যথা, জন্ডিস, কৃমি, রক্ত বন্ধ হওয়ার কাজে মাশরুম ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
- মাশরুম রক্তচাপ কমায় এবং টিউমার কোষের বিরুদ্ধে কাজ করে।
- নিয়মিত মাশরুম থেকে শারিরীক ও মানসিক শক্তি বৃদ্ধি হয়। রক্ত সঞ্চালণ বৃদ্ধি পায় এবং সর্দি, কাশি দূর হয়।
- মাশরুম উচ্চ রক্তচাপ ও বহুমুত্র রোগীদের জন্য উপকারী।
- মাশরুমে যথেষ্ট আঁশ (Fiboc) থাকার শরীর স্লীম রাখতে সহায়তা করে।
- মাশরুম কৌষ্ঠ কাঠিন্য দূর করে। মাশরুম প্রোটিনের হজম ক্ষমতা (Digestability) শতকরা ৭০-৮০ ভাগ হওয়ায় রোগীদের জন্য সহজপাক এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খাবার।
- রং বোতলের কর্ক. ছবির ফ্রেম, ফুলদানী হিসেবেও মাশরুম ব্যবহার করা হয়।
মাশরুমের জাত
প্রকৃতিতে মাশরুমের কয়েক হাজার জাত রয়েছে যার মধ্যে ৮-১০টি জাতের বাণিজ্যিক চাষাবাদ হয়ে থাকে। বাংলাদেশের তাপমাত্রা ও আপেক্ষিক আদ্রতা মাশরুম চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। বাংলাদেশের চাষপযোগী মাশরুমের জাতগুলো হলো-
ক্রমিক নং সাধারণ নাম ইংরেজী নাম
১ ঝিনুক মাশরুম Oyster mushroom
২ দুধ মাশরুম Milky mushroom
৩ কান মাশরুম Wood ear mushroom
৪ বোতাম মাশরুম Button mushroom
৫ তাপ সহনশীল বোতাম মাশরুম Heat tolerate button mushroom
৬ শিতাকে মাশরুম Shitake mushroom
৭ খড় মাশরুম Paddy straw mushroom
চাষ পদ্ধতি (ঝিনুক মাশরুম)
- বাংলাদেশে বর্তমানে বানিজ্যিকভাবে ঝিনুক মাশরুমের চাষই বেশি প্রচলিত। চাষীদের জন্য স্পন ভর্তি সাবষ্ট্রেট সহ উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত পিপি ব্যাগ সরবরাহ করা হয়। সরবরাহকৃত এসব ব্যাগ থেকে চাষীরা ফসল উৎপাদন করে থাকেন। মোটামুটি ৫০০ গ্রাম ওজনের এসব ব্যাগের ভিতরে উৎপাদন হচ্ছে-
১. কাঠের গুড়া = ৬৪%
২. গমের ভূষি = ৩২%
৩. ধানের তুষ =৪%
- উক্ত মিশ্রণের সাথে সামান্য পরিমাণ চুন এবং পানি মিশানো হয়। প্যাকেটগুলো খড়ের চাষাবিশিষ্ট বাঁশের বেড়া ও পাকা মেঝের ঘরে কাঠ ও বাঁশের তাকে সারি করে সাজিয়ে রাখতে হবে।
- অত:পর ব্যাগের দুপাশে অধর্চন্দ্রাকৃত্রির করে কেটে কাটা অংশটির খানিকটা চেছে ফেলে দিতে হবে।
- চাছার পর ব্যাগটি পরিষ্কার পানিতে ২১-৩০ মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হবে।
- ব্যাগটি অত:পর পরিষ্কার ফ্লোর বা তারের জালির ওপর আধাঘন্টা সময় উল্টে রাখতে হবে যাতে ভেতরের বাড়তি পানি ঝড়ে যায়।
- এবার চাষঘরে কাঠের ব্যাক বা বাঁশের মাচায় পরিমিত বিছিয়ে ব্যাগগুলো তার ওপর সারিবদ্ধভাবে রাখতে হবে।
- বাইরের তাপমাত্রা কম থাকলে ব্যাগের উপর পলিথিন ঢেকে দিয়ে ২/৩ দিন রাখতে হবে যাতে ব্যাগের ভেতরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। এ সময় ঘরের আর্দ্রতা ৮০% এবং তাপমাত্রা ২৫-৩০০ সে. হওয়া দরকার। ধারনা দিয়ে-
- ব্যাগগুলোতে নিয়মিত পানি স্প্রে করতে হবে।
- পলিথিন ডাকা থাকলে ৩/৪ বার ১০-১৫ মি. সময় ডাকনা সরিয়ে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করে দিতে হবে।
- ২/৩ দিন পর ব্যাগের কাটা অংশ দিয়ে সাদা পিন সদৃশ অংশ দেখা যায়। আরো ২/৩ দিন পর মাশরুম বড় হলে সংগ্রহ করতে হবে।
- অন্য দুপাশ থেকে অত:পর একইভাবে চেছে দিয়ে পানি স্প্রে করলে নতুনভাবে মাশরুম উৎপাদন হবে।
- একটি মাশরুমের ব্যাগ থেকে ৩/৪ বার ফসল তোলা যায়।
পোকা-মাকড় ও রোগবালাই দমন
মাশরুমে মাছির প্রকোপ দেখা দিতে পারে। এজন্য ম্যালাথিয়ন (০.১%) স্প্রে করা যেতে পারে। এছাড়া ফর্মালিডিহাইডে (৪%) তুলা ভিজিয়ে সানস্ট্রেটে ঘসে দিলে সবুজ বাদামী বা নীল মোল্ড দূর হবে।
উত্তর সমূহ